“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটা কঠিন নয় বরং তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ”
-অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, সাবেক ডীন, ফার্মেসী অনুষদ, ঢাবি; সাবেক চেয়ারম্যান, বিসিএসআইআর, উপদেষ্টা, ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ খুবই অপ্রতুল। আর বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত কিছু আসনে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাকে পরীক্ষা না বলে ভর্তিযুদ্ধ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত। প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে লড়াই করতে হয়। এইচএসসি লেভেলের সিলেবাসকেই প্রশ্নের ভিত্তি ধরা হলেও একজন শিক্ষার্থীর মৌলিক জ্ঞানের গভীরতা যাচাই ও বিষয়বস্তু বুঝে ওঠার যোগ্যতা নির্ণয় করাই ভর্তি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এই তীব্র প্রতিযোগিতায় অনেকে কম জিপিএ নিয়েও চান্স পেয়ে যায়। তাই আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা কঠিন কিছু নয়, বরং এইচএসসি পরবর্তী সময়ের সদ্ব্যবহার, বিগত বছরগুলোর প্রশ্নের আলোকে বিষয়বস্তু আত্মস্থ করতে পারলে এই তীব্র প্রতিযোগিতায়ও জয়ী হওয়া সম্ভব। আমার স্নেহের শিক্ষার্থীদেরকে বলবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটাকে কঠিন মনে না করে, তোমাদের মেধা ও মননের সমম্বয় সাধন করে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও। সাফল্য অবধারিত।
“প্রস্তুতি হওয়া চাই বাস্তব সম্মত এবং কৌশলী”
-অধাপক ড. মোঃ হায়দার আলী, সাবেক চেয়ারম্যান, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি; উপদেষ্টা, ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে শুধু মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। কেননা মেধাবীদের জন্য ভাল ফলাফল করার ক্ষেত্রে কোন আসন নির্দিষ্ট নেই, কিন্তু সেই মেধাবীদেরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে রয়েছে আসন সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শীর্ষ মেধাবীদের প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা আবশ্যক। দিনে দিনে এ প্রক্রিয়াটি কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। কেননা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাল স্কোরধারীদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু একই হারে বাড়েনি ঢাবি’র আসন সংখ্যা। তাই ভর্তি পরীক্ষা এখন রূপ নিয়েছে ভর্তি যু্েদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী হতে চাই তীব্র আকাক্সক্ষা এবং চূড়ান্ত প্রস্তুতি। যেহেতু ভর্তি পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যয়ের সিলেবাসকে ভিত্তি করে কিছুটা কৌশলগত পন্থায় মৌলিক জ্ঞান নির্ভর প্রশ্ন করা হয়। তাই প্রস্তুতিও হওয়া চাই বাস্তবসম্মত এবং কৌশলী। বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, রুটিন মাফিক পড়াশোনা, উপযুক্ত পরামর্শ, সঠিক এবং বাস্তবসম্মত নির্দেশনার আলোকে জোর প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। নিজের যোগ্যতা এবং সামর্থ্যরে পুরোপুরি প্রমাণ দিতে পারলেই কেবল স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনায় শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করাটা অনেক সহজ।
“মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়”
-কাজী মোঃ বরকত আলী, সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, উপদেষ্টা, ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং
অরুন্ধতী রায় বলেছিলেন, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সারা বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীর চোখে থাকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের রঙিন স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সেই রঙিন স্বপ্ন হয়ে যায় ধূলি-ধূসর। মূল সমস্যা কিন্তু মেধার অভাব নয়, বরং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমিত আসন-ই শিক্ষার্থীদেরকে ঠেলে দিচ্ছে পাহাড়সম প্রতিযোগিতার মুখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যে প্রশ্ন করা হয়, তা মূলত এইচএসসি পর্যায়ের সিলেবাস নির্ভর হলেও, শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান যাচাই করার উদ্দেশ্যে কিছুটা অফাধহপবফ খবাবষ এর হয়ে থাকে। তবে তীব্র আকাক্সক্ষা, দৃঢ় মনোবল আর বিষয়ভিত্তিক কৌশলাবলম্বী উত্তর জানার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অন্যদের চেয়ে প্রতিযোগিতায় কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারে।
বিভিন্ন কলেজের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর পরামর্শ
“ভর্তি পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে যোগ্যতম না হয়ে উপায় নেই”
-মোঃ মোফাজ্জল হোসেন, অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা সিটি কলেজ ও Author of Advanced Learnr’s English Grammar
কলেজের চৌকাঠ পেরোনো প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটি স্বপ্ন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে দেশের সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তাদের অবতীর্ণ হতে হয় এক তীব্র প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায়। অনেক সময় ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীরাও ঢাবি’তে চান্স পায় না। আবার স্বাভাবিক মানের একজন শিক্ষার্থীও চান্স পেয়ে যায়। আমি মনে করি কঠোর পরিশ্রম দ্বারা যে কোন লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন বলেছিলেন “আমার যত অর্জন তার পিছনে মেধার অবদান ১% আর পরিশ্রমের ৯৯%।” তাই ভর্তি পরীক্ষার আগের এ মূল্যবান সময়ে যারাই ভাল পড়াশোনা করবে সাফল্যের মুকুট তাদের মাথাতেই শোভা পাবে। সেই সাথে কৌশলী ও আত্ম-বিশ্বাসী হওয়া দরকার। আত্ম-বিশ্বাসী মানুষেরাই জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়।
“স্বপ্ন ও সাধনায় সব সম্ভব”
-এটিএসএম মাসুদুল হাকিম, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, গণিত বিভাগ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
বাংলাদেশের মত জনবহুল একটি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এর কারণ আমাদের দেশের শিক্ষার্র্থীরা কম মেধাবী ব্যাপারটা এমন নয়, বরং উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অপ্রতুল। আর কোন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো কথাই নেই। এ যেন পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। তবে যারা স্বপ্ন দেখতে জানে তাদের ভয়ের কিছু নেই। স্বাপ্নিকেরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঠিকই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। তাই তোমার স্বপ্ন যত সুদৃঢ় হবে তোমার সাধনাও তত অটল হবে। স্বপ্ন আর সাধনায় সবই সম্ভব। মনে রাখবে, পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের সেই উক্তি- “এটা স্বপ্ন নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তা-ই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না”।
“সময়কে দাম দাও, সময় তোমাকে দাম দিবে”
-মোঃ ইসহাক আলী, সিনিয়র প্রভাষক, ইংরেজি, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
মানুষের জীবনে কিছু কিছু সময় আসে যা দৈর্ঘ্যরে বিচারে ছোট হলেও তাৎপর্যের বিচারে বিরাট। তেমনি একটি মহামূল্যবান সময় ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টুকু। এ সময়টার ওপর নির্ভর করেছে পুরো ভবিষ্যৎ জীবন। তাই এ সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে সর্বোত্তম ভাবে। রুটিন মাফিক পড়াশোনা, সহজে মনে রাখার কৌশল রপ্ত করা আবশ্যক। একজন কৌশলী শিক্ষার্থী অল্প সময়ে অধিক জিনিস শিখতে পারে। তাই কৌশলী হতে হবে। কবির কথা মনে রাখতে হবে-
“সময়ের মূল্য বুঝে করে যারা কাজ
তারা হয় স্মরণীয় ধরণীর মাঝ”
মানুষ পরিশ্রম করলে আল্লাহ কাউকে বিফল করেন না। কাজেই এ সময়টাকে কঠোর অধ্যবসায় সহকারে পড়াশুনা কর। তোমার পুরস্কার তুমি পাবেই।